শরিয়ত পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে শেরপুর সদরের লছমনপুর মুর্শিদপুর দরবার শরিফের খাজা মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে একদল স্থানীয় জনতা। এ সময় গুঁড়িয়ে দিয়েছে পীরের আস্তানা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চালানো এ হামলায় কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ অংশ নেয়। তিন দিন আগে ওই দরবারে হামলা করতে গিয়ে সংঘর্ষে আহত একজন মারা যাওয়ার জেরে আবার সেখানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে বলে জানা গেছে। হামলাকারীরা দরবার থেকে গরু, মহিষ, ছাগল ও দুম্বাসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে। হামলার আশঙ্কায় সেখানে সকাল থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকলেও বাধা উপেক্ষা করে জনতা তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দরবারের খাদেমরা। তবে বৃহস্পতিবারের হামলায় কেউ হতাহত হয়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হামলা চালানো হয় বলে জানান শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে সদর উপজেলার লছমনপুর গ্রামের মুর্শিদপুর খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারের মুরিদ এবং স্থানীয় জামতলা ফারাজিয়া আল আরাবিয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং তৌহিদী জনতার বিরোধ চলছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দোজা পীরের আস্তানা বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয় তৌহিদী জনতা। পীরের আস্তানা থেকে শরিয়ত পরিপন্থী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ তোলেন তারা। এর জেরে গত ২৬ নভেম্বর ভোরে দোজা পীরের দরবারে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় জনতা ও দরবারের মুরিদদের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় কান্দাশেরীরচর গ্রামের ইদু মিয়ার ছেলে হাফেজ উদ্দিনসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়। আহতদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দরবারবিরোধী পক্ষের হাফেজ উদ্দিনের অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ২৭ নভেম্বর সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় স্থানীয় একটি কলেজ মাঠে নিহতের জানাজার ব্যবস্থা করা হয়। এ জানাজায় শেরপুরের সব মাদরাসা বন্ধ রেখে অংশ নিতে মাইকিং করা হয়।
জানাজা ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোর থেকে মুর্শিদপুর দরবার ও কুসুমহাটি বাজার এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অবস্থান নেন। জোহরের নামাজের পর জমশেদ আলী কলেজ মাঠে হাফেজ উদ্দিনের জানাজায় বক্তারা জানান, হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীনদের মুক্তি এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোজা পীরকে গ্রেফতার করতে হবে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা জানাজা ছেড়ে লাঠিসোটা নিয়ে পীরের আস্তানার দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় পীরের আস্তানা। এ সময় পীরের দরবারে থাকা মালামাল লুটপাট করে জনতা। এ সময় সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে, তা উপেক্ষা করে পীরের দরবারে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় জনতা। হামলাকারীরা দরবারে থাকা গরু-মহিষ, দুম্বা, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদিপশু ও সব ধরনের মালামাল লুট করে। প্রায় তিন ঘণ্টার তাণ্ডবে হাজার হাজার জনতার ভিড়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন মো. তারেক জানান, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের গাড়ি কুসুমহাটি বাজারে পৌঁছলেও নিরাপত্তার অভাবে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ইজিবাইকে করে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে আগুন নিভে গেছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। মানুষের উপস্থিতি বেশি থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে হাফেজ উদ্দিন নিহতের ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান তিনি।