সামান্য ভুলে ৪ কোটি মানুষ মৃত্যুর শঙ্কায়, উচ্চ ঝুঁকিতে যারাX
প্রতীকী ছবি।
ক্রমবর্ধমান হারে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারিয়ে যাওয়ার ফলে আগামী বছরগুলোতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে এমন সব জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডেম স্যালি ডেভিস।
তিনি জানিয়েছেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর-এর কারণে মৃত্যুহার চলতি বছরের (২০২৫ সাল) মধ্যে দ্বিগুণ হবে। সেই সঙ্গে পরবর্তী ২৫ বছরে প্রায় ৪ কোটি মানুষ এমন সব নতুন নতুন প্রাণঘাতী সুপারবাগের কারণে প্রাণ হারাবে। এদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকবে বলে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে তিনি।
ডেম স্যালি ডেভিসের মতে, সাধারণ চিকিৎসা যেমন অস্ত্রোপচার ও প্রসবকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে এএমআরের কারণে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে অনেকে যা ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হতে পারে। খবর জিও নিউজের।
জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি) ব্যাখ্যা করেছে, ‘এএমআর তখন হয়ে থাকে যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অনুজীব বা ছত্রাকের মতো জীবাণু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল চিকিৎসার বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। এসব জীবাণু যত বেশি ফার্মাসিউটিক্যালস যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের সংস্পর্শে আসে, এগুলো তত বেশি অভিযোজনক্ষম হয়ে ওঠে।’
আরও পড়ুনঃ এবার আমি*রাতে বিমান বিধ্ব*স্ত
সংবাদমাধ্যম দ্য অবজারভার-কে স্যালি ডেভিস বলেন, ‘প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে মারা যাচ্ছে, এবং এই সংখ্যা আগামী ২৫ বছরে আরও বাড়বে। এটি সত্যিই ভয়ংকর।’
এর আগে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৫ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে ৩ কোটি ৯০ লাখের বেশি মৃত্যু হতে পারে যার জন্য সরাসরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ দায়ী। ১৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যবিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাতে এসব বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকি স্বরূপ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ। ২০৫০ সালের মধ্যে মানবজাতি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল পরবর্তী যুগে পা দেবে যেখানে মানুষ আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের মতো জীবাণু যখন তাদের নির্মূলে ব্যবহৃত ওষুধগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রপ্ত করে ফেলে তখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ঘটে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই এএমআরকে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য এবং উন্নয়নের হুমকি বলে অভিহিত করেছে। মানুষ, প্রাণী এবং উদ্ভিদে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের অপব্যবহার এবং অত্যধিক ব্যবহারের ফলে, এসব রোগজীবাণু এক পর্যায়ে ওষুধ প্রতিরোধী সক্ষমতা অর্জন কর ফেলতে পারে। আমাদের এই সামান্য অসাবধানতার কারণে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে যেতে যাচ্ছে মানবজাতি। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক এবং এই গবেষণার প্রধান ড. ক্রিস মারে বলেন, এএমআরের ভয়াবহতা এর ব্যাপকতার সময়ই নতুন গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
আরও পড়ুনঃ সচিবালয়ে অগ্নি*কাণ্ড: গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে আসলো বি*স্ফোরক তথ্য!”
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নতুন অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপের ওপর যথাযথ মনোযোগ দেয়া দরকার যাতে আমরা সত্যিই এমন একটি বড় সমস্যার সমাধান করতে পারি।’
বয়োজ্যেষ্ঠ্যরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ: অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী এই প্রকল্পে একযোগে কাজ করেছে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। গবেষণায় বলা হয়েছে, আনুমানিক ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে ২২টি প্যাথোজেন, ৮৪টি প্যাথোজেন-ড্রাগ কম্বিনেশন এবং ১১টি সংক্রমণের কারণে যেগুলো ইতোমধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হয়ে উঠেছে। ১৯৯০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০৪টি দেশ এবং অঞ্চল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের জন্য যেসব মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি মৃত্যু হতে পারে আগামী ২৫ বছরে।
প্রায় ৫২ কোটি মানুষের ব্যক্তিগত রেকর্ড পর্যালোচনা করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। মেলবোর্নের ডোহার্টি ইনস্টিটিউটের একজন পিএইচডি ছাত্র জিন লি বলেন, এএমআরে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমলেও ৭০ এর বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এই দুটি বিপরীত প্রবণতা চলছে ১৫ বছরের কম বয়সীরা অনেক কম আক্রান্ত হচ্ছে অন্যদিকে বয়োজ্যেষ্ঠরা বেশি শিকার হচ্ছেন এমন প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়ায়।
আরও পড়ুনঃ বি*এনপি কারও কাছে মাথা নত করে না: দুদু
বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন : ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা আইসিইউতে মারা যাওয়া রোগীদের ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হলো সুপারবাগ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউর চিকিৎসক ড. সায়েদুর রহমানের মতে, ২০১৮ সালে বিএসএমএমইউর আইসিইউতে ভর্তি হওয়া আনুমানিক ৯০০ রোগীর মধ্যে ৪০০ জনই মারা গেছে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে। দ্য টেলিগ্রাফের এই প্রতিবেদনটি ছয় বছর আগে অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়।
২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সায়েন্টিফিক রিসার্চের এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ওই জরিপে অংশ নেয়া বাংলাদেশি রোগীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছেন।