বয়সকালে প্রভাবশালী ও অর্থসম্পদের অভাব ছিল না। প্রথম স্ত্রীর ঘরে চার সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে সাত সন্তানের পিতা শতবর্ষী তফের আলী। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে ছোট ছেলে আইনাল হোসেনের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করলেও পরিবারের কেউই খবর রাখেন না শতবর্ষী এই পিতার। জরাজীর্ণ কাঠের ভাঙাবাড়িতে রোদ-বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করে একাই অনেক কষ্টে বসবাস করছেন তফের আলী।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৯৫ বছর। কিন্তু তিনি দাবি করেন তার বয়স ১০৮ থেকে ১১০ বছরের মধ্যে হবে। আদালত তফের আলীর কষ্টের কথা শুনে ছেলে আইনুলের বিরুদ্ধে সমন জারি করে গত ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করে।
তবে পিতা তফের আলীর অভিযোগ, সন্তানরা জোরপূর্বক আপস করার জন্য চাপ দিলে ১৫ অক্টোবর আপসের জন্য কোর্টে যান তফের আলী। কিন্তু আইডি কার্ড না নিয়ে যাওয়ায় আগামী ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ দিন ধার্য করেন আদালত।
তফের আলী জানান, সন্তানরা তাকে দেখে না। নিজেরা ভালো বাড়িতে থাকে আর তাকে রেখেছে ভাঙা জরাজীর্ণ বাড়িতে। ভাত খেতে দেয় না। অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে চেয়ে ভাত খান। এ ছাড়া ওষুধের জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় তাকে। ছেলে আয়নাল ও তার স্ত্রী তাকে খাবার পর্যন্ত দেয় না। এসব সহ্য করতে না পেরে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবার সেই সন্তানের চাপেই আপস করতে আদালতে গিয়েছেন তিনি। তারপরও সেই সন্তানরা তাকে খেতে পর্যন্ত ডাকেননি।
এদিকে আইনুল ও তার স্ত্রী জানায়, তার বাবা প্রায়ই ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করে। এর আগেও করেছে এবং সেই মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন।
আইনালের স্ত্রীর ভাষ্য, তাকে দেখাশোনার কাজ তিনি ও তার স্বামী করেন। মাঝে মাঝে ঠুনকো বিষয় নিয়ে ঝামেলা ছাড়া বড় কোনো ঘটনাই ঘটে না। শ্বশুরের প্রতি যত্নের কোনো কমতি নেই।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৯ ছেলে ও ৩ মেয়ে থাকা সত্ত্বেও কেউই তাকে দেখে না। এতোগুলো সন্তান থাকা সত্ত্বেও কোনো সন্তানই বৃদ্ধ বাবাকে ভাত দেয় না, এতে তারাও অবাক। না দেখার কারণে দীর্ঘদিন থেকেই ভাঙা ঘরে একাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে আসছে তফের আলী। ছেলেরা ভালোভাবে তার দেখাশোনা করলে হয়তো আর বৃদ্ধ তফের আলী মামলা কতে হতো না। তাদের দাবি, শেষ বয়সে এসেও যেন ভাত-কাপড়ের জন্য আর আদালতের বারান্দায় না ঘুরতে হয় এমন ভালো সিদ্ধান্ত তার পরিবার থেকে আসবে।
তফের আলীর আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তফের আলী তার ছেলে আইনাল হোসেনের বিরুদ্ধে সন্তানরা ভাত না দেওয়া ও মারপিটসহ অন্যান্য অভিযোগে এ বছরের ২০ আগস্ট নওগাঁর আমলী আদালতে মামলা করেন। আদালত তফের আলী কষ্টের কথা শুনে ছেলের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এটা অমানবিক একটা মামলা। এতোগুলো সন্তান থাকার পরও বৃদ্ধ পিতাকে ভাত দেয় না, এটা অমানবিকতার পরিচয় বলে তিনি জানান।