রাজধানীর উত্তরায় ছাত্র সমন্বয়কের ভুয়া পরিচয়ে বাসায় প্রবেশ করে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধারসহ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তর পশ্চিম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. মারুফ হাসান পল্লব (৩২) ও আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিব (২৬)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে লুট হওয়া ১৪ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ এক লাখ টাকা, একটি পাসপোর্ট ও ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
উত্তরা-পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৯ থেকে ১০ জন দুষ্কৃতকারী উত্তরা-পশ্চিম থানার ১২নং সেক্টরের শাহ মখদুম এভিনিউ রোডের ৬১ নাম্বার বাসার ম্যানেজারকে জিম্মি করে বাসার ৬ষ্ঠ তলায় জনৈক ড. হারুনুর রশিদ হাওলাদারের ফ্ল্যাটে বিজিএমইএ ও শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ছাত্র এবং ছাত্র সমন্বয়কের পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুনঃ যে কারণে ১৮তম নিবন্ধনে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী পাশ করলো
দুষ্কৃতকারীরা ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করার পর ফ্ল্যাটে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর খুলে ফেলে এবং উপস্থিত ড. হারুনুর রশিদ হাওলাদারের স্ত্রী ড. মমতাজ শাহানারাকে (ইডেন কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল) বলে তাদের ফ্ল্যাটে অবৈধ অস্ত্র ও টাকা মজুদ আছে।
তারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ড. মমতাজ শাহানারার নিকট ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে কয়েকজন তার সঙ্গে কথা বলতে থাকে এবং বাকিরা তার শোবার ঘর থেকে ৮৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ১৫ লাখ টাকা লুট করে নেয়।
স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে তারা রাত ২টা ৪০ টার দিকে চলে যাওয়ার সময় সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআরও সঙ্গে নিয়ে যায়। গত রোববার (২০ অক্টোবর) ড. মমতাজ শাহানারা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৯ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা-পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
উত্তরা-পশ্চিম থানা সূত্রে আরও জানা যায়, মামলা রুজু হওয়ার পর উত্তরা-পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। এরপর তাদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে।
অভিযানকালে গত ২২ অক্টোবর ভোর রাতে উত্তরা ৪নং সেক্টরের হোটেল প্যারাডাইজ থেকে ঘটনায় জড়িত মো. মারুফ হাসান পল্লবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত ১৪ ভরি স্বর্ণালংকার, একটি পাসপোর্ট ও ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
উত্তরা-পশ্চিম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজ রহমান জানান, বুধবার গ্রেপ্তার মো. মারুফ হাসান পল্লবকে আদালতে প্রেরণ করলে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে এবং অপর অভিযুক্তদের ব্যাপারে তথ্য প্রদান করে।
অতঃপর মারুফ হাসান পল্লবের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উত্তরা ১২নং সেক্টর থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত এক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজিবও উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তার এবং লুণ্ঠিত বাকি মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।