২০২১ সালে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে র্যাব সদর দপ্তরে পাঁচদিন আটকে রাখা হয়েছিল। এরপর মাদক ব্যবসায়ীসহ তিনটি মামলার আসামি সাজিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ঘটনা। ২৮ জুলাই আমাকে আমার বাসা থেকে স্কোয়াড্রন লিডার আলী আশরাফ র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যান। বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার পর পাঁচদিন আমাকে র্যাব সদর দপ্তরে আটকে রাখা হয়। এরপর ষষ্ঠ দিনে আমাকে সদর দপ্তর থেকে র্যাব ফোর-এ পাঠানো হয়। র্যাব ফোর-এর অ্যাডিশনাল এসপি মো. আক্তারুজ্জামান। তিনি তখন সিনিয়র এএসপি ছিলেন। তিনি চোখ বেঁধে মাইক্রোতে করে কোনো একটা জায়গায়ে নিয়ে যান। পরে আমি জানতে পারি সেটা ছিল মিরপুর-১।
ঈশিতা বলেন, মিরপুর-১ নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে মাদকসহ ভিডিও করেন। তারপর আবার আমাকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওরা আগেই আমার বডি মেজারমেন্ট নিয়ে রেখেছিল। তারা নিজেরাই ড্রেস তৈরি করে রেখেছিল। ওদের আরও ব্লেজার, সুজ ছিল, এগুলো আমাকে পরিয়ে ছবি তোলে। এরপর ১ আগস্ট বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিং করেন কমান্ডার খন্দকার আলী আশরাফ।
ভুক্তভোগী বলেন, ওই দিনই সকাল বেলা আমাকে মাদকসহ এবং সব পেপারস, যা যা ছিল সব কিছু নিয়ে মিরপুর-১ এ ছিলাম; মাদক পাচারকারী দলের সঙ্গে, মানে আমাকে প্রেজেন্ট করা হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে। ওখান থেকে ষষ্ঠ দিনে আমাকে অ্যারেস্ট করে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারপর তিনটা মামলা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ হলো- মাদক ব্যবসায়ী, প্রতারক ও জালিয়াতি হিসেবে।
তিনি জানান, এ জন্য আমি স্কোয়াড্রন লিডার আলী আশরাফ, আইটি স্পেশালিস্ট রাকিব ও অ্যাডিশনাল এসপি মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের নামে অভিযোগ করেছি।
ওই পাঁচদিন আমার চোখ বন্ধ ছিল, যখন আমি সদর দপ্তরে ছিলাম, প্রথমদিন রাতটাই আমার চোখ খোলা ছিল। দ্বিতীয় দিন থেকেই চোখ বাঁধা ছিল। এ সময়ে বারবারই এক রুম থেকে আরেক রুমে শিফ্ট করা হয়েছে। বিভিন্ন অফিসাররা ছিলেন, কথা বলেছিলেন। মাঝখানে আলী আশরাফ, রাকিব আর রাজিব-উনাদের তিনজনকে আইন্ডেন্টিফাই করতে পেরেছি, সবাইকে না।
আমাকে চোখ বেঁধে যখন বিভিন্ন কথা বার্তা বলছিল তখন তাদের কনভার্সেশনে যেটা বুঝেছি, এবং আমার সামনে তারা লাউড স্পিকার অন করে কথা বলছিল, সেটা হচ্ছে মনে হয় এয়ার ফোর্সের কোনো অফিসারের সঙ্গে কথা বলছিল। আমি এমবিবিএস পাস করার পর সেখানে কিছুদিন মেডিকেল অফিসার হিসেবে ছিলাম, যেটা কিনা তারা ২০২১ সালের প্রেস ব্রিফিংয়ে একটা বিষয় উল্লেখ করেছে, যে আমি একটি সরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলাম। সেখানে অনৈতিক কাজের জন্য নাকি আমাকে সেখান থেকে ডিসমিস করা হয়। যেটা সম্পুর্ণ মিথ্যা।
আমি কিন্তু সেখান থেকে নিজেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এসেছিলাম। কারণ হলো, সেখানকার পরিবেশ ভালো ছিল না, তাদের নেচার ক্যারেক্টর ঠিক মনে হয়নি। এসব কারণে ওখানে এ্যাডজাস্টমেন্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্লাস আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে হবে, দেশের বাইরে যেতে হবে, লাইসেন্সেসিং পরীক্ষা দেবো-অনেক প্রেসার ছিল আমার।
পাঁচদিন আটকে ছিলেন, ওই সময়ে কি তারা আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ঈশিতা বলেন, তারা তো ভালো আচরণ করতে জানে না। খারাপ আচরণই করেছে। অবশ্যই খারাপ আচরণ করেছে। তখন আমার অপারেশনের পরবর্তী সময়। আমি একটা পোস্ট অপোরেটিভ পেসেন্ট ছিলাম, সার্জারি হয়েছিল। যখন আমি বললাম, আমি পোস্ট অপারেটিভ পেসেন্ট। তখন সিঙ্গেল ক্র্যাচ ইউজ করে হাঁটতাম। আমাকে ক্র্যাচটাও নিতে দেওয়া হয়নি। যখন আমি বললাম আমার অপারেশন হয়েছে। এ সার্জারি, তখন আলী আশরাফ বলেন- বাংলায় কওন যায় না। এটা যদি হয় একজন কোয়াড্রন লিডারের ল্যাঙ্গুয়েজ, তাহলে তাদের বিহেভিয়ার কী হতে পারে, তাদের কাছে কী এক্সপেক্ট করা যায়।
Share