Breaking News

‘সব কথা কি বলে দিতে হয়’, হাসিনার নতুন ফোনালাপ ফাঁস

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার পর একবার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।

এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নিদের্শনা পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি শেখ হাসিনার ‘কণ্ঠে’ বেশ কয়েকটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

নেটিজেনদের দাবি, ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সেসব ফোনালাপই ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমনই একটি তিন মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ফোনালাপ রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতেও প্রচার হতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

নতুন এই ফোনালাপে শেখ হাসিনার কণ্ঠের মতো একজনকে বলতে শোনা গেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তোমাদের বাড়িঘরে যারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, তাদের বাড়িঘর নেই? সব কথা কি বলে দিতে হয়? বর্তমানে এই সরকারকে মানুষ ব্যর্থতার চোখে দেখছে।

ফোনালাপের অন্য প্রান্তের কণ্ঠটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলের বলে জানা গেছে। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।

তবে এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মো. বুলবুল বলেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি শাকিল আলম বুলবুলের। বুলবুলসহ সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ দুজনই এখনও আত্মগোপনে আছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। তাদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযানো চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ ডাবিং রুমে সালমান-শাবনূরের খুনসুটি দেখে ফেলেন সামিরা, রাতেই রহস্যজনক মৃত্যু
ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখন বেশি বাড়াবাড়ি করছে। দেখ, ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শত্রুরা টিকে কি না। কাউকে পালাতেও দেওয়া হবে না।’

এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) বলেন, জ্বি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি।

শেখ হাসিনা বলেন, একদম একদম।

তখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আপনি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগিয়ে যান নেত্রী। তবে সবাইকে সব কাজ বরাদ্দ রেখে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা কর। কিছু বলো না।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জ্বি নেত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও ইউনূসের গুটি গুটি চেহারা…।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জ্বি নেত্রী অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়েই কেউ মুখ খুলতে পারছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন ওদের ভয় দিতে হবে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জ্বি নেত্রী, ওই যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জের কালাম ভাই এমপি আর আমি উপজেলার চেয়ারম্যান বর্তমান ছিলাম নেত্রী, আর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরপর ছিলাম দুবার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। ওনার বাড়ি-গাড়ি সব জ্বালিয়ে দিছে। আমারও বাড়ি গাড়ি পুড়িয়ে দিছে নেত্রী। আমাদের অসংখ্যা মামলা দিয়েছে, আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন।

আরও পড়ুনঃ ৬ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন শিশু মুনতাছির
শেখ হাসিনা বলেন, না আমি একটা কথা বলি, তোমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিছে কে?

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ওরাই নেত্রী, জামায়াত-বিএনপি সকলই।

শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ঘরবাড়ি নেই?

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জ্বি আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জ্বি না, না নেত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের নাই, তাহলে কারো ঘরবাড়ি থাকবে না।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, একটা সংশয় নেত্রী, গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারি, তাদের নামে একটি মামলাও হয়নি। কিংবা তাদের বাড়িঘরেও ওরা যায়নি। ওরা কীভাবে টিকল?

শেখ হাসিনা বলেন, শোনো ওরা দেখে যেগুলি পোটেনশিয়াল, যেগুলি দেখে একেবারেই শক্ত তাদের ওরা তালিকা করে। সবাইকে কাউন্ট করে না। সেই জন্য বললাম, যাদের বাড়িঘর পোড়া গেছে, তাদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে, কারা পোড়াতে আসছিল, আর আমার বাড়ি যদি পুড়ে তাদেরও পুড়বে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জ্বি নেত্রী, জ্বি নেত্রী আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সঙ্গে কথা বলে বুকটা ভরে গেল নেত্রী। আপনি ভালো থাকবেন।

আরও পড়ুনঃ আ.লীগকে নির্বাচনে বাধা ও নিষিদ্ধের পক্ষে নন মির্জা ফখরুল
শেখ হাসিনা বলেন, মামলা, আমারত শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, সারা দেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি, সবাই তালিকা কর। তোমরাও তালিকা কর। ২২৭ মার্ডারের লাইন্সেস পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, সোয়া ২০০ মামলায় একই শাস্তি। তাই না। ঠিক আছে সেই শাস্তি নেব। তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ। শেখ হাসিনা বলেন, এবার একবার আসতে পারলে কেউ ফেলাইতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

জানা গেছে, শাকিল আলম বুলবুল ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন সন্ত্রাসী। হত্যা গুম খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে পারদর্শী হওয়ায় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ তাকে সহজেই কাছে টেনে নেন। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানান। চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি ধর্মীয় কাজের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের মামলায় আসামি হন।

আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধানের নেতৃত্বে উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা ভাঙচুর লুটপাটে তিন সাঁওতালকে হত্যা করেন শাকিল আলম বুলবুল। সাঁওতাল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৯০ নম্বর আসামিও শাকিল আলম বুলবুল।

সূত্র : কালবেলা

About Admin

Check Also

অপসারিত হচ্ছেন না ইউপি চেয়ার‍ম্যান ও মেম্বাররা! কারণ যা জানা গেল

সিটি করপোরেশন-পৌরসভার মতো অপসারিত হচ্ছেন না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার‍ম্যান ও মেম্বাররা। সাড়ে ৪ হাজার ইউপিতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *