Breaking News

ভয়াবহ প্রস্তুতি নিচ্ছেন আ.লীগের নেতাকর্মীরা, গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস

সরকার পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্পষ্ট। পুলিশের মনোবলে ধস নামার সুযোগে বাড়ছে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, হামলা ও সহিংসতা। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে তথ্য— পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে দলবদ্ধভাবে ঢাকামুখী হচ্ছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, তারা রাজধানীতে অস্থিরতা তৈরি কিংবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পুলিশ প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে গেছে। চট্টগ্রামের প্রতিটি থানাকে বিশেষ নির্দেশনায় দেওয়া হয়েছে অপরাধ দমন ও রাজনৈতিক উত্তেজনা মোকাবিলার কৌশল।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে সহিংসতা, দখল, সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। একদিকে রাজনৈতিক শূন্যতা, অন্যদিকে পুলিশের দুর্বল মনোবলের সুযোগে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ বাটা শোরুমে লুটপাটের দৃশ্য দাবিতে ভাইরাল হওয়া ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
গোয়েন্দা পুলিশের একটি গোপন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় শেখ হাসিনাকে ফেরানোর দাবিতে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সমবেত হতে বলা হয়েছে। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের সব থানাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিএসবি) থেকে সব থানায় একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে অস্থির পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে— সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, যাদের নামে মামলা আছে তাদের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো, নৌঘাট, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে নজরদারি বাড়ানো, বিএনপি ও জামায়াতপন্থি স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় ঢাকামুখী যাত্রা প্রতিহত করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি করে উসকানিদাতাদের শনাক্তকরণ, অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, ভাড়ায় চালিত গাড়ি ও স্ট্যান্ডগুলোর ওপর নজর রাখা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের সময় কিছুটা ধাক্কা খেলেও এখন পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধার হয়েছে। আমরা নিয়মিত অভিযানে আছি এবং অপরাধে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম বলেন, ‘নগরীতে পুট ও নাইট পেট্রোল, নতুন নতুন চেকপোস্ট, এবং মিনি টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। যেসব এলাকা অস্থিরতার ঝুঁকিতে আছে, সেখানে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জুনায়েত কাউছার কালবেলাকে বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত নই, তবে হুমকি বা গুজব পেলে আমরা নিয়মমাফিক প্রস্তুতি নিই, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। পুলিশ সবসময় সচেতন ও সতর্ক রয়েছে।’ ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমদ কালবেলাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি এখন অনেক স্বাভাবিক। পুলিশ এখন সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরানো কিংবা রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে কারা জড়িত— তা সরাসরি আমাদের দায়িত্ব নয়। তবে যারাই অপরাধে জড়াবে, তাদের আইনের আওতায় আনতেই আমরা কাজ করছি।’ দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার কালবেলাকে বলেন, ‘জনগণের সহযোগিতায় আমরা ভালোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি। পুলিশের মনোবল ফিরে এসেছে। নিয়মিত টহল ও অভিযান চলছে। যেসব দিক থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, সেসব মাথায় রেখেই আমরা নির্দেশনা মেনে কাজ করছি।’

About Admin

Check Also

আট মাসে কত হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করলো সরকার

গত জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। শেখ হাসিনা সরকারের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

No comments to show.